নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস, ওপারেতে সর্ব সুখ আমার বিশ্বাস। নদীর ওপার বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, কহে, “যাহা-কিছু সুখ সকলি ওপারে “।

নদী প্রবাহমান। সেই পর্বতের শিখরে উৎস থেকে মোহনায় মিলিত হবার ঠিক আগের মুহূর্ত অবধি কঠিন পর্বতের শিলাখণ্ড ও সমভূমির মাঝখান ভেদ করে এগিয়ে চলে । ফলে দুটি ভিন্ন পারের সৃষ্টি হয়। যা কালক্রমে শস্য-শ্যামলা হয়ে ওঠে । কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত নদীর কোন পারই এতে খুশি নয় । নদীর এপার নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে যে তার পারে কোন সুখ শান্তি নেই । আছে শুধু অসুবিধা আর দুঃখ ।যত সব সুখ ওপারে রয়েছে। আবার নদীর ওপার ও দীর্ঘশ্বাস ফেলে এই একই কথা বলে । আর মনে হয় যে সকল সুখ থেকে বঞ্চিত এবং সকল সুখের অধিকারী হল এপার।

Advertisements

মানুষের চাহিদার কোন শেষ নেই । মানুষের চাহিদা অন্তহীন ।মানুষ যা চায় তার অনেক বেশি সে পেতে চায় । ফলে সে কি চায় আর কি চায় না সে সম্বন্ধে তাদের কোন ধারনা থাকে না। মানুষ সদা সর্বদায় নিজের অর্থনৈতিক-সামাজিক ও সার্বিক উন্নতি কামনা করে। ফলে নিজের অবস্থায় সুখে থাকা তার স্বভাব বিরুদ্ধ হয়ে পড়ে। নিত্য সুখের উল্লাসে ঘুরতে থাকা মানুষ কিছুতেই তার চাওয়া-পাওয়াকে একত্র করতে পারেনা । ফলে সে সর্বদাই অতৃপ্ত থাকে ।ফলে তার চাওয়া পাওয়া, সুখ-দুঃখ, সুযোগ বঞ্চনার চুলচেরা বিচারে মানুষ নিজেরই অজান্তে নিজের সঙ্গে অন্যের তুলনা করে। ফলে তার অতৃপ্তি ও অসন্তোষ এর পরিমান ক্রমশ বাড়তেই থাকে। আকাঙ্ক্ষার আগুন ক্রমশ দাবানলে পরিণত হয়। নিজের পরিবেশের লোক ও নিজের গোষ্ঠীর লোকেদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে । ভুলে যায় যে কোন পূর্ণ জিনিসের মধ্যেও বিরাট শূন্যতা ও অভাব থাকতে পারে । এই মনোভাব মানুষকে যেমন আরো উচ্চাকাঙ্খার দিকে ঠেলে দেয় ,তেমনি হতাশাগ্রস্থ ও হীনমনস্ক করে তোলে ।

প্রকৃতপক্ষে মানুষ অপরের সঙ্গে নিজের তুলনা করার সময় নিজের অভাবটাকেই বড় করে দেখে। অপরের অভাব দুঃখ দেখার মত দৃষ্টিভঙ্গি তাদের থাকে না। ফলে তাদের মন সংকীর্ণ থেকে ক্রমশ সংকীর্ণতর হয়ে যায়। যা খুবই দুঃখজনক।

Advertisements

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

Related Posts

Scroll to Top