যে নদী হারায়ে স্রোত চলিতে না পারে , সহস্র শৈবাল-দাম বাঁধে আসি তারে। যে জাতি জীবন হারা অচল অসাড়, পদে পদে বাঁধে তারে জীর্ণ লোকাচার।

নদী প্রবাহমান ।কিন্তু তার গতি যদি কোনরকম বাধাপ্রাপ্ত হয় তবে তাতে নানা আগাছাও শৈবাল বাসা বাঁধে ।ফলে তার গতি অনেক বেশি মন্থর হয়ে পড়ে । ঠিক তেমনি যদি কোন জাতি কোন কারণে তার প্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলে তবে সে অচল ও অসাড় হয়ে যায় ।তাকে পদে-পদে মিথ্যে লোকাচার বাধা দান করে তার এগিয়ে যাবার পথে । ফলে তার চলার গতি ও নদীর মতো মন্থর ও শিথিল হয়ে পড়ে। চলমানতাই হল জীবন। আর থেমে যাওয়াই হলো মরণ ।গতির অন্যতম অর্থই হলো প্রাণের স্পন্দন। কিন্তু এই প্রাণের স্পন্দন এর জন্য কিছু জিনিসের প্রয়োজন। সেগুলি হল উপযুক্ত শিক্ষা, এক সুন্দর ভারসাম্যযুক্ত পরিবেশ ইত্যাদি। এরজন্য বিজ্ঞানমনস্কতার ও প্রয়োজন । কিন্তু কোন জাতি যদি আধুনিক সভ্যতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় শিক্ষার আলোকে আলোকিত না হয়ে অশিক্ষার অন্ধকারে হারিয়ে যায় ।তখন সেই জাতি তার চলনশক্তি হারিয়ে ফেলে মৃত জাতিতে পরিণত হয়। অগ্রগমনকে অস্বিকার করে পরিবর্তনের দিকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়াই তাদের মৃত্যু ডেকে আনে।

Advertisements

এরকম অচল অসার জাতি ক্রমশ মিথ্যাচার লোকাচার ,কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাসের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়ে ।স্বচ্ছলতাহীন মুক্ত জীবন, ধর্মহীন এই জাতি খুব সহজে আবদ্ধ হয় কুসংস্কার ও মিথ্যা লোকাচারের পৈশাচিক নাগপাশে । যেখান থেকে বেরিয়ে আসা কোনদিন ও সম্ভব হয় না ।এর ফলস্বরূপ বন্ধ হয়ে যায় জাতির স্বাভাবিক বিকাশ বৃদ্ধি ।ফলে চলন শক্তিহীন, বিকাশ বুদ্ধিহীন ,এইসব জাতি হয়ে পড়ে পঙ্গু ও নিশ্চল। তাদের জীবন হয়ে যায় বিকৃত ,বিবর্ণ ,কদর্য, পঙ্কিল ,ক্লিন্ন ।

গতিহীন সমাজ, সভ্যতা ও জাতির পক্ষে কুসংস্কার, ভন্ডামি, গোঁড়ামি ও অন্ধ লোকাচারের নাগ পাশ থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হয় না ।তারা এই কারাবাস থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে পায় না ।ফলে ধীরেধীরে তারা মৃত্যুবরণ করে ।তারা ক্রমশ বিলুপ্ত হয়ে যায় অতীতের কালো অন্ধকারে ।জীর্ণ লোকাচার ডেকে আনে একটি জাতির অকাল অপমৃত্যু।

Advertisements

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

Related Posts

Scroll to Top